বাজেট জনকল্যাণমুখী: প্রধানমন্ত্রী

নতুন (২০১৯-২০) অর্থবছরের জন্য জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটকে কল্যাণমূলক বাজেট বলে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের সব উদ্যোগ-কার্যক্রমই জনগণের কল্যাণের জন্য। এই বাজেট জনকল্যাণমূলক বাজেট।’ শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেলে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন-উত্তর পর্বে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সমালোচনাকারীদের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কে কী বললো, তা আমাদের দেখার বিষয় নয়। সমালোচনা করার অধিকার সবারই আছে। কেউ ভালো কথা বললে তা আমরা গ্রহণ করবো, আর কেউ ভালো কথা না বললে তা আমরা ধরবো না।’

স্বাভাবিক নিয়মে বাজেট পেশ ও বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু এবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অসুস্থ থাকায় তিনি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হতে পারেননি। তার পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বাজেটের খুঁটিনাটি দিক তুলে ধরে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংবাদ সম্মেলনে সরকার প্রধান বলেন, ‘‘এবারই প্রথম প্রস্তাবিত বাজেটে যুবকদের উদ্যোগী করে তুলতে ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী আমরা ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ নামে শহরের সব সুবিধা দিয়ে গ্রাম-উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছি। শেয়ার বাজারে আমরা সুশাসন দেখতে চাই। বিকশিত পুঁজিবাজার দেখতে চাই। এ কারণেই পুঁজিবাজারকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। পুঁজিবাজারে দ্বৈতকর পরিহার করা হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘গবেষণা উন্নয়নে ৫০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, প্রণোদনা বাবদ তৈরি পোশাক রফতানিতে ২ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণে ৬০দিন সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করায় দেশের ৪ লাখ ১৫ হাজার জেলেকে ৬৫ কেজি চাল দেওয়ার কর্মসূচি চলছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বর্তমানে ২১ হাজার ১৬৭ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে।

১০ বছরেও সরকার খেলাপি ঋণের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিডিয়া মালিকরা কে কত টাকা ঋণ নিয়ে কত টাকা পরিশোধ করেছেন, তা আগে খুঁজে বের করুন। তার হিসাব দিতে বলুন।’ তিনি আরও বলেন, ‘খবর নেবেন, পত্রিকার মালিকরা কে কোন ব্যাংক থেকে কত টাকা ঋণ নিয়েছেন। সব ব্যাংক থেকে এই তথ্য বের করুন। যত মিডিয়া আছে, প্রত্যেকে বলবেন, কোন মালিক কোন ব্যাংকের কত টাকা ঋণ নিয়ে কত টাকা শোধ দেননি। খেলাপি হয়ে নিজেরা হিসাব করলে আমাকে আর প্রশ্ন করতে হবে না।’

মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বৃত্তির পরিমাণ বাড়িয়ে প্রাথমিকে ৭৫০ টাকা, মাধ্যমিকে ৮০০ টাকা ও উচ্চশিক্ষায় ৯০০ টাকা করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। সারাদেশে ১০০টি ইপিজেড করা হচ্ছে। সেখানে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। পিপিপি (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ)কে উৎসাহ দেওয়া হবে।’ এসময় কোম্পানি আইন সংশোধন করা হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থপাচার ঠেকাতে অপ্রদর্শিত অর্থ হাউজিং ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছি। আমরা মনে করেছি, এ সব অপ্রদর্শিত টাকা কে কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন, কে জানে? তাই বলেছি আগে বের করুক।’ তিনি বলেন, ‘এতে সৎ মানুষের হতাশ হওয়ার কারণ নেই। সৎ মানুষের সাহসই থাকে আলাদা। নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন থেকেই ভ্যাট আইন কার্যকর হবে। ভ্যাট নীতিমালাও ঠিক করা হয়েছে। ভ্যাট আইন কার্যকর করতে ইএফডি মেশিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।’

দেশে প্রচুর চাল উৎপাদন হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমদানির প্রয়োজন নেই। তাই চাল আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে সব ধরনের ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। দেশীয় চিনি শিল্পরক্ষায় চিনির টাক্স বাড়ানো হয়েছে।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী হেসে বলেন, ‘চিনি খেলে ডায়বেটিস হয়, তাই চিনির দাম বাড়িয়ে দিয়েছি।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘কাউকে কষ্ট না দিয়ে রাজস্ব জোগাড় করতে চাই। ২০২১ সালের মধ্যে এক কোটি করদাতা তৈরি করতে চাই।’ আয়-রোজগার ভালো থাকলে মানুষ কর দিতে উৎসাহী হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্‌শি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *