দখলদারদের দৌরাত্বে ধামরাইয়ে অস্তিত্ব সংকটে ঐতিহ্যবাহী ছাতলাই বিল, নিরব প্রশাসন ।। 

ধামরাইয়ে অস্তিত্ব সংকটে ঐতিহ্যবাহী ছাতলাই বিল, নিরব প্রশাসন ।। 

নিজস্ব প্রতিবেদক :

ধামরাইয়ে ভূমি দস্যু ও আবাসন ব্যবসায়ীদের দৌরাত্বে খাল, অর্পিত ও খাস জমি মাটি ফেলে ভরাট করে নামজারির পর অন্যত্র বিক্রীর অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, কেউ কেউ আবার ইজারা নিয়ে বছর বছর শর্ত মোতাবেক নবায়নের কাজটি করলেও বাস্তবে শর্ত ভঙ্গ করে  ভরাট, ভবন নির্মান সহ ইজারা সম্পত্তি বিক্রী করে দিচ্ছেন কৌশলে।  অভিযোগ আছে ভূমি অফিস ও প্রশাসনের এক শ্রেণির অসাধুদের ম্যানেজ করেই চলছে এমন সব অনিয়ম। আর এসব নিয়ে কথা বললে জনবল সমস্যা সহ বহুমূখী অযুহাত দেখিয়ে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে দ্রুত ব্যবস্থা নেবার কথাটি বলেই দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চান দায়িত্বরতরা।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে ধামরাই পৌর-এলাকায়  বসবাসরত একাধিক ব্যক্তির সাথে আলাপকালে তারা জানান, ধামরাই পৌর-এলাকার দক্ষিণপাড়া মৌজার শতবছরের পুরোনো ছাতলাই বিল যার এসএ দাগ ১,২,৩,৪,৫ এবং সিএস দাগ ১, ৫, ৪, ১১ বিলের জমির পরিমান ৩.১৬ একর। একসময় পৌরসভায় বসবাসরদের মাছের চাহিদা, সেচ চাহিদা সহ দৈনন্দিন কাজে বিলের পানি ব্যবহার করা হতো। দু’দশকেরও কম হবে এলাকার প্রভাবশালী ভূমি দস্যু ও আবাসন ব্যবসায়ীরা কৌশলে ছাতলাই  বিলের জমি ভরাট করে দখলে লিপ্ত হওয়ায় পর বিলের আকৃতি ও অস্তিত্ব এক-তৃতীয়াংশের নীচে নেমে এসেছে।

 সরেজমিনে দেখা  যায়, ছাতলাই  বিলের দু’পাশে রয়েছে  আবাসন প্রকল্প  আমিন মডেল টাউন ও বরাত নগর আবাসন প্রকল্প । দুটি আবাসন প্রকল্প ছাড়াও এক পাশে ধামরাই কলেজ এর সম্পত্তি এবং অপর পাশে ইজারাদারও দখলদারদের স্থাপনা ও  রাস্তা।

অভিযোগ আছে আবাসন প্রকল্পের একটি মাটি ফেলে ভরাট করে তাতে প্লট ও গাছপালা রোপন করেছেন, অপরটি মাটি ফেলে ভরাট করে হাউজিংয়ে যাওয়ার রাস্তা, প্লট ও মসজিদ গড়ে তুলেছেন। এছাড়া প্রভাবশালী ভূমি দস্যুরা ইজারা নিয়ে বেশ কিছু জমি বিক্রী করে দিয়েছেন।আলাপকালে বসবাসরদের কাছ থেকে তেমন তথ্যই পাওয়া যায়। এছাড়া ব্যক্তিগত ভাবেও লবিং করে ইজারা নিয়ে ঘরবাড়ি করে বসবাস করছেন কয়েকজন।

ইজারাকৃত জমি কিনেছেন এমন ক’জনের সাথে সরেজমিনে যোগাযোগ করলে এসব ব্যক্তিরা জানায়, ভূমি অফিস তাদের ইজারা দিয়েছেন, সে অনুসারে তারা ঘরবাড়ি করে বসবাস করছেন। ভূমি অফিস তো সবকিছু জানে।

এদিকে ছাতলাই বিলটি মাছ চাষের জন্য ৩ বছর পর পর ইজারা দেয়া হলেও আবাসন প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা ইজারাদারকে ম্যানেজ করেই বিলের জমি দখলের কাজটি কৌশলে চালিয়ে যাচ্ছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

ভূমি অফিস ও উপজেলা প্রশাসনের প্রধান দায়িত্ব সরকারের সম্পত্তি রক্ষা করা কিন্তু ধামরাইয়ের ভূমি অফিস ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন অফিসের দায়িত্বরতরা তা যেন পুরো ভুলতে বসেছেন।

এদিকে নদী ও খাল, বিল রক্ষা কমিটির সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপকালে জানা যায়,  ধামরাইয়ে আমিন মডেল টাউন,  বরাতনগর আবাসন প্রকল্প, ধানসিড়ি আবাসন প্রকল্প হাউজিং ও আবাসন ব্যবসার নামে অর্পিত সম্পত্তি, খাস জমি ও খাল-বিল ভরাট করে প্লট আকারে বিক্রী করে দিচ্ছেন। এ নিয়ে ২০১০/২০১১ সালের দিকে পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলেও বেশ ক’বছর ধরে সব নিরব থাকায় সরকারী একর একর জমি নামে-বেনামে কাগজপত্র বানিয়ে ওই ৩ হাউজিং কোম্পানী নিজেদের করে বিক্রী করে দিচ্ছেন।

ধামরাই ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) অন্তরা হালদার এর নিকট বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ইজারা দেওয়ার বিষয়টি আমার হাতে নেই, আমি শুধু ইজারা প্রাপ্ত ব্যক্তির নিকট থেকে ইজারার টাকা আদায় করি। ছাতলাই বিল নিয়ে কথা হলে তিনি জানান লিখিত অভিযোগ পেলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন । এ সময় তিনি এ প্রতিবেদকের নিকট এ বিষয়ে তথ্যগত সহায়তা চান, যেন ব্যবস্থা নিতে পারেন।

এ বিষয়ে ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামিউল হক জানান, আমাদের নিকট এ ধরনের কোন অভিযোগ নেই, তবে অর্পিত ও খাস জমি , সরকারী খাল, বিল ও জলাশয় দখল করা কাউকে ছাড় দেয়া হবে না, সে যতই শক্তিশালী হোক না কেন।

এদিকে বিগত দিনে ধামরাই দক্ষিণপাড়া মৌজার ছাতলাই বিল সহ ধামরাই উপজেলার অর্পিত সম্পত্তি ও খাস জমি , সরকারী খাল, বিল ও জলাশয় দখলকারীদের হাত থেকে সরকারী সম্পত্তি উদ্ধারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামিউল হক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) অন্তরা হালদার প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ধামরাই সচেতন মহল।

চলবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *