টাকা নিয়ে মারধর হজম করলেন শ্রমিক নেতা !

টাকা নিয়ে মারধর হজম করলেন শ্রমিক নেতা!

নিউজ হাঁট ডেস্ক :

ছাঁটাইকৃত তিন পোশাক শ্রমিকের অধিকার আদায়ে না কি কারখানায় গিয়ে উপর্যুপরি লাথি, থাপ্পর ও কিল-ঘুষি খেয়েছেন। কারখানা মালিক ও তার ভাড়াটে লোকজনের হাতে চরম লাঞ্ছিত ও অপমানিতও হয়েছেন। প্রতিবাদে শুভাকাঙ্খী তিন শ্রমিক নেতাসহ অনুসারীদের নিয়ে দল ভারী করে গেছেন থানায়। মারধরের ঘটনায় অভিযোগ করেছেন। এরপর ন্যায্য বিচারের দাবী করে তার সঙ্গীয় শ্রমিক নেতারা থানার ভিতরেই জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়েছেন। শাস্তি চেয়েছেন মারধরকারী কারখানা মালিকের। শ্রমিকনেতা বলে কথা, তাই পুলিশও ছিল তৎপর। ঘটনার সাথে সাথেই পুলিশ হেফাজতে থানায় আনা হয় অভিযুক্ত কারখানা মালিককে।

যদিও শেষ পর্যন্ত মিমাংসার কথা জানিয়ে মারধরের অভিযোগ তুলে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই শ্রমিক নেতা। আর তাই আশুলিয়ার হোয়াইট সোয়েটার লিমিটেড কারখানার মালিক বকুল ভূইয়াকে রাতভর থানা হেফাজতে রেখে পরদিন ছেড়ে দেয় আশুলিয়া থানা পুলিশ।

তবে জানা যায়, মারধরের শিকার হয়ে ওই শ্রমিক নেতার ভিতর বিচার পাওয়ার যে অগ্নিশিখা জ্বলছিল এতে না কি পানি ঢেলে দিয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই টাকার বিনিময়ই না কি মার খেয়েও নিজের অভিযোগ তুলে নিয়েছেন আশুলিয়ার মিজানুর রহমান নামে ওই শ্রমিক নেতা! এদিকে ‘ম্যানেজ’ হয়ে লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ তুলে নেওয়ায় মিজানের এমন কান্ডে হতাশা প্রকাশ করেছেন অন্যান্য শ্রমিক নেতারা ।

মিজানুর রহমান বাংলাদেশ গার্মেন্ট এন্ড টেক্সটাইল ফেডারেশনের ঢাকা জেলা উত্তরের আহ্বায়ক। তিনি আশুলিয়া আঞ্চলে অনেক দিন ধরেই শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে কাজ করে আসছেন বলে জানা গেছে।

আশুলিয়া থানায় মিজানুর রহমানের লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার সন্ধ্যায় আশুলিয়ার জামগড়া চৌরাস্তা এলাকায় হোয়াইট সোয়েটার লিমিটেড নামে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় তিন শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বিষয়ে জানতে সেখানে যান মিজানুর রহমান ও কাইয়ূম নামে দুই জন। এসময় তিন শ্রমিকের ছাঁটাইয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে কারখানার মালিক বকুল ভূইয়াসহ আরো ৩-৪ চারজন তাকে অনবরত থাপ্পর, কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে নীলাফোলা জখম করে। এমনকি তাকে প্রাননাষেরও হুমকি দেয় তারা।

এ ব্যাপারে শ্রমিকনেতা মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিমাংসার কথা জানালেও টাকার বিষয়ে প্রশ্ন করতেই তড়িঘরি করে ফোন কেটে দেন। এরপর অনেকবার চেষ্টা করেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে রবিবার শ্রমিকনেতা মিজানকে মারধরের ঘটনার পর গভীর রাত অবধি যারা থানায় উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক সারোয়ার হোসেন অন্যতম। এছাড়া স্বাধীন বাংলা গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের আশুলিয়া শাখার সভাপতি আল কামরানসহ আরো দুই শ্রমিকনেতা থানায় উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক সারোয়ার হোসেন হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘মিমাংসা হবে বলে আজ সকালে আমাকে থানায় ডাকা হলেও লজ্জায় আমি যাইনি। কেননা আমার বিবেক সায় দেয়নি। এছাড়া এ সংক্রান্ত আমি নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছি- বীরের মত ভাব দেখাইয়া বিরাল হওয়া লজ্জাজনক।’‘কারণ সব কিছুতো আর ভাঙ্গাইয়া বলা যায় না। এজন্য এভাবে লিখেছি।’ ‘আমার কথা হলো- আমি আমি যদি আগেই ম্যানেজ হয়ে যাই, তাহলে ঝামেলায় যাবো না। সব কথাতো আর মন খুলে বলা যায় না, ভাই। তবে আপনি (প্রতিবেদক) যা শুনেছেন, এ্যাক্সটলি তাই ঘটেছে।’

এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক জন এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বলেন, একজন শ্রমিক প্রতিনিধি কখনই এ ধরণের লজ্জাস্কর কাজ করতে পারেন না। টাকার বিনিময়ে স্বত্তা বিক্রি করা শ্রমিকনেতার শোভা পায় না। একজন শ্রমিকনেতা সব সময় শ্রমিকদের অধিকারের জন্য কাজ করে। এজন্য তাকে সব ধরণের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হয়।

তবে টাকার বিনিময়ে মিমাংসা হয়েছে কি না সে ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ হোসেন।

সাভার

২৫.১১.১৯

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *