ই-কমার্সে ভ্যাট আরোপ, খরচ বাড়বে অনলাইন কেনাকাটায়

২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অনলাইন ব্যবসায় তথা ই-কমার্স থেকে ভ্যাট অব্যাহতি তুলে নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে ই-কমার্স কেনাকাটায় সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট (মূল সংযোজন কর) দিতে হবে। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় সোশ্যাল মিডিয়া ও ভার্চুয়াল বিজনেসে ই-কমার্সকে অন্তর্ভুক্ত করে এই ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘এটা একটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। যখন এই খাত বিকাশের পথে, তখনই এই ধরনের সিদ্ধান্ত ক্রেতাদের অনলাইন বিমুখ করবে। কারণ, তাদের কেনাকাটার খরচ অনেক বেড়ে যাবে।’’

এ বিষয়ে দেশের সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, ‌‌‘ই-কমার্সে ভ্যাট আরোপ অবশ্যই যৌক্তিক নয়। এটা হয়তো ভুল করে হয়েছে। গতবারও এমনটা হয়েছিল। আমি মনে করি, আরও অন্তত ৫ বছর ই-কমার্সে ভ্যাট অব্যাহতি থাকা উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘ই-কমার্সে সবে শুরু। এখন ক্রেতাদের অনলাইনমুখী করার সময়। ভ্যাট আরোপ করলে তা হবে না। আমরা মনে করি ই-কমার্সে এখনও ভ্যাট আরোপের সময় হয়নি।’

এ বিষয়ে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ‘ফেসবুক, ইউটিউব, গুগলকে ভ্যাটের আওতায় আনতে গিয়ে ই-কমার্সকেও ভার্চুয়াল বিজনেস হিসেবে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব। এটা এই খাতের বিকাশে প্রধান অন্তরায় হবে বলে আমি মনে করি।’

তিনি জানান, ই-কমার্স থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের জন্য শনিবার (১৫ জুন) ই-ক্যাব একটি গোলটেবিল বৈঠক করবে। এছাড়া সংবাদ সম্মেলন করে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাবে।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আজকের ডিল-এর প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাসরুর বলেন, ‘ই-কমার্স ব্যবসার ওপর ভ্যাট আরোপ উদীয়মান এই শিল্পের ওপর বিরাট আঘাত। গত ২ থেকে ৩ বছরে এই শিল্পে ১০ হাজারের বেশি নতুন উদ্যোক্তা এসেছেন। কর্মসংস্থান হয়েছে ২ লাখের বেশি তরুণের।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের যেখানে সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ও তরুণদের কর্মস্থান, সেখানে এই ভ্যাট আরোপ সরকারের নিজস্ব নীতির পরিপন্থী। এছাড়া এটি সরকারের ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা-২০১৮ –এর পরিপন্থী।’

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান প্রিয়শপ ডট কমের প্রধান নির্বাহী আশিকুল আলম খান জানান, ই-কমার্সকে ভার্চুয়াল ব্যবসায়ের সংজ্ঞায় ফেলে সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব এই খাতে এক প্রকার দুর্যোগ ডেকে আনবে।

উল্লেখ্য, গত অর্থ বছরে অনলাইন ব্যবসায় তথা ই-কমার্সে পাঁচ শতাংশ ভ্যাট প্রস্তাব করা হয়। পরে তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠন, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর উদ্যোগের ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিষয়টি ছাপার ভুল বলে উল্লেখ করে এবং বাজেট পাসের সময় ওই ভ্যাট বাদ দেওয়া হয়। এরও আগে একবার ই-কমার্সে চার শতাংশ ভ্যাটের প্রস্তাব করা হয়েছিল। সংশ্লিষ্টদের আপত্তির মুখে সেবারও তা পাস হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *